কমিশন বাণিজ্য করে আ.লীগ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ কাজ দিয়ে শত কোটি টাকার মালিক মহাখালী গণপূর্তের প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউক
কমিশন বাণিজ্য করে আ.লীগ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ কাজ দিয়ে শত কোটি টাকার মালিক মহাখালী গণপূর্তের প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউক
নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী ম্যানিফেস্টো বাস্তবায়নে নেমেছে মহাখালী গণপূর্ত বিভাগ। আ. লীগ দলীয় ঠিকাদারদের ডেকে এনে কাজ দেওয়াসহ দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম ফয়জুল ইসলাম ডিউকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জুলাইয়ের রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রন্থ মহাখালী এলাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বিআরটিএ ও সেতু ভবনের মেরামত কাজ দরপত্র আহ্বানের আগেই শুরু করার নির্দেশ দেন প্রকৌশলী ডিউক। পরে ওটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করে নির্ধারিত কিছু আ’লীগ ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দেন, যার বিনিময়ে কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ডিভিশনটিতে এভাবে ইচ্ছেকৃত বৈষম্য তৈরীর কারণে প্রকৌশলী ডিউক যে কোন সময় বঞ্চিত ঠিকাদারদের রোষানলে পড়ে লাঞ্ছিত হতে পারেন বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। আর এ রকম পরিবশে তৈরী হওয়ার কারণে জানুয়ারী মাস থেকে শুরু করে চলতি বছরের জুনক্লোজিং পর্যন্ত হাতে গোনা কয়েকদিন ডিভিশনে অফিস করেছেন তিনি। অথচ একই ক্যাম্পাসের অন্যান্য নির্বাহী প্রকৌশলীরা নিয়মিত অফিস করলেও তিনি কখনো হজ্জ্ব ক্যাম্প কখনো সার্কেল অফিস আবার কখনো জোন অফিসে বসে ফাইলপত্র স্বাক্ষর করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ পাওয়া কাজগুলো সাধারণত এলটিএম পদ্ধতিতে সম্পন্ন হলেও, অর্থবছরের শেষপ্রান্তে প্রায় অর্ধকোটি টাকার কাজ ওটিএম পদ্ধতিতে করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করানো হয়েছে। এছাড়াও, গত অর্থবছরের ৪-৫ কোটি টাকার বকেয়া বিল ছাড় করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছ থেকে ১৫/২০% পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রকৌশলী ডিউকের বিরুদ্ধে।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গোপণ কোটেশন দেখিয়ে ওই অর্থবছরে আরও প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, স্বৈরাচার আমলে ডিউক ছিলেন শেরেবাংলা নগর ৩নং সাব-ডিভিশনের এসডিই ও পরবর্তীতে ২নং ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী। এই সময়েও তার বিরুদ্ধে বেনামী ঠিকাদারী ব্যবসাসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যায়। পরবর্তীতে অধিদপ্তরের সমন্বয় শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকার সুবাদে দেশব্যাপী ফান্ড ডিজবারসমেন্টে বরাদ্দের ০.৫% কোন কোন ক্ষেত্রে ১% নগদ আদায় করতেন বিভাগীয় বরাদ্দ থেকে। অনেক ক্ষেত্রে বরাদ্দ কেটে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২% করে আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সেখানে বর্দ্দা কাটাছেড়ার কাজ করেছেন প্রায় ৬বছর।
অপরদিকে, ডিভিশনটির মহাখালী সাব-ডিভিশনের এসডিই ওয়াহিদ বিন ফরহাদের বিরুদ্ধেও বেনামী ঠিকাদারি ব্যবসা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন সাধারণ ঠিকাদাররা। তিনি ইতোপূর্বে মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগের অধীনে ঢাকা গণপূর্ত উপবিভাগ-৭ এর দায়িত্বে থ্কাতে বেনামী ঠিকাদারী ব্যবসাসসহ বহুবিধ জাল-জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত। ওই সাবডিভিশনের আওতায় কোন ঠিকাদার কাজ পেলে কাজ উঠানো বাবদ চুক্তিমূল্যের ৪০% থেকে ৫০% অর্থ নিজেই হিসাব করে রেখে দিতেন ঠিকাদারের কাছ থেকে। ওই সাবডিভিশনে থাকতে আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের ওপরে ঘুষ দুর্নীতির ষ্টীম রোলার চালিয়েছেন তিনি। চাকরির সল্প ব্যবধানে এভাবে তিনি নামে-বেনামে কয়েক কোটি টাকার সহায়-সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, ডিউক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভাগটি হরিলুটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। পুরনো ঠিকাদারদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে তিনি কোটি টাকার প্রকল্প ভাগ করে দিয়েছেন। বিশেষত ৪.১৮ কোটি ও ১.৪৮ কোটি টাকার বরাদ্দে সেতু ভবনের সিভিল, স্যানিটারি, অডিটোরিয়াম এবং রেক্টোফিটিং কাজ দিয়েছেন অনিক ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানকে, যাদের রেক্টোফিটিংয়ে অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বঞ্চিত প্রতারিত সাধারন ঠিকাদাররা। ৩.৬০ কোটি টাকার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সংস্কার কাজ দিয়েছেন এনএল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন-কে। ২.৫৩ কোটি টাকায় একই ভবনের অ্যালুমিনিয়াম জানালা, ফলস সিলিং, রং ও বাউন্ডারি ওয়াল সংস্কারের কাজ পেয়েছে খান এন্টারপ্রাইজ।
যদিও মার্চ মাসে এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, বাস্তবে জুলাই পর্যন্ত অনেক কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। একইভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের ৮টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যান্সার ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পে উত্তরায় কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ভবন তৈরী, রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, এসটিপি, ডিপটিউবওয়েল. আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার, পাম্প হাউজ ও পানির বিতরণ লাইন, ফুটপাত, বাউন্ডারী ওয়াল লিংক কোরিডর নির্মাণ কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ সকল কাজে সিডিউল বহির্ভূত নিম্নমাণের নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা সহ কাজ শেষ না হওয়া সত্ত্বেও চলতি বছরের জুন মাসে এডভান্স বিল দেয়া হয়েছে মোটা অংকের পার্সেন্টেজের বিনিময়ে।
অভিযোগ আছে ঘুষ দুর্নীতির টাকায় তার গ্রামের বাড়ি ও রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে বেনামে শত শত কোটি টাকার সম্পদ করেছেন করেন বিলাসী জীবন যাপন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার জন্য প্রকৌশলী ফয়জুল ইসলাম ডিউকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন ও খুদেবার্তা পাঠানোর পরও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের দাবি, এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পুরো বিভাগে সুশাসনের স্থিতি বিনষ্ট হবে।
প্রকৌশলী ডিউকের অবৈধ সম্পদের বিস্তারিত ও ঘুষ দুর্নীতির আরো অনিয়ম নিয়ে আসছে দ্বিতীয় পর্ব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin
কমেন্ট বক্স